Thursday 21 February 2013

Filled Under: ,

ভাষা আন্দোলনের দেশে হিন্দি আগ্রাসন লজ্জার ব্যাপার..

Share
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনি তমদ্দুন মজলিশের অন্যতম সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে তমদ্দুন মজলিশের নেতৃত্বে আছেন। শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। এই ভাষাসৈনিক এখনও সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত। ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিশ প্রসঙ্গে তার এ সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন আহমদ বাসির

*আমরা জানি তমদ্দুন মজলিশ ভাষা আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ছিল। আমরা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি তমদ্দুন মজলিশ কি ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, নাকি এ আন্দোলনের অন্য কোনো লক্ষ্য ছিল?
—তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল ইসলামকে সাংস্কৃতিকভাবে উপস্থাপন করা। মাতৃভাষার প্রশ্নটা যখন এলো, সেটাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হলো। কারণ, ইসলাম তো হাওয়ায় কায়েম হয় না—একটা জায়গাতে এবং একটা সময়ে কায়েম হয়। সে সময় পাকিস্তান আন্দোলন কেবল শেষ হয়েছে। পাকিস্তান কী চায়, কী তার লক্ষ্য এ সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুব গভীর ছিল না, অনেকটা স্লোগানভিত্তিক আন্দোলন ছিল। সে সময়ে এটা মনে করা হলো যে, এই যে একটা মহত্ লক্ষ্য নিয়ে আমরা ইংরেজ রাজত্বের অবসান ঘটালাম সে সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার এবং সেটার জন্য একটা কালচারাল মুভমেন্ট থাকা দরকার, যাতে করে মানুষের মধ্যে একটা পরিষ্কার ধারণা সৃষ্টি হয়। 
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই পয়লা সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়। আর তার মাত্র ১৪ দিন পরেই একটা পুস্তিকা প্রকাশিত হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ এই নামে। এ প্রশ্ন এজন্যই উঠল যে, পাশাপাশি আরেকটি রাষ্ট্রও স্বাধীনতা লাভ করল ১৫ আগস্ট—ভারত। ভারতীয় নেতারা ১৫ আগস্টের যথেষ্ট আগেই ঘোষণা করেছিল, তাদের রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দি। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাপারে এ ধরনের কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই পাকিস্তান কায়েম হয়ে যায়। এটা নিয়ে বিতর্ক চলছিল পাকিস্তান আন্দোলনকারীদের মধ্যেই। উর্দুভাষী নেতারা চাচ্ছিলেন, ওখানে হিন্দি হলে আমাদের উর্দু হতে হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে দেখা গেল তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তান কিংবা পূর্ববঙ্গের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তারা বাংলাভাষী। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার দাবি একটা উঠতে পারে। এটা নিয়েই তমদ্দুন মজলিশ বলল যে দুটো রাষ্ট্রভাষা হবে। উর্দুর ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু বাংলা অবশ্যই একটি রাষ্ট্রভাষা হতে হবে। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হলো। সমস্যাটা বাড়ল এজন্য যে, পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন উচ্চপদস্থ আমলা যারা পাকিস্তানে এলো তাদের অধিকাংশই ছিল উর্দুভাষী। বাংলাদেশে উচ্চপদস্থ আমলা ছিল না বললেই চলে। আইসিএস কোনো বাঙালি মুসলমান ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের একটা প্রভাব পড়ল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই তারা ভেতরে ভেতরে উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নিচ্ছিল। দেখা গেল, পোস্টকার্ড ছাপা হচ্ছে তাতে ইংরেজি ও উর্দু লেখা। পোস্টকার্ড, মানিঅর্ডার ফর্ম, ইনভেলাপ—সর্বত্র ইংরেজি ও উর্দু। এছাড়া তর্কও চলছিল প্রকাশ্যে। আলিগড় ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. কে উদ্দীন একটি বিবৃতি দিলেন পাকিস্তান হওয়ার আগেই যে, একমাত্র উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সঙ্গে সঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে একটা উত্তর দিলেন যে, না, এটা হতে পারে না। এই প্রেক্ষাপটেই মূলত ভাষা আন্দোলন সূচিত হয়। ১৯৪৭ সালেই প্রথম সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিশের অন্যতম সদস্য নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে। তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমই মূলত ভাষা আন্দোলনের স্থপতি, তিনি প্রথম শুরু করেছিলেন। 
* জানা যায়, জন্মলগ্নেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা সে সময় বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন, এর হেতুটা কী ছিল।
—তখনকার হেতুটাই বলি আমরা। সেন আমলে বলা হতো সংস্কৃতি ভাষা হচ্ছে দেবভাষা। তখন বাংলা ভাষার কেবল শৈশব বলা চলে। তখনই সংস্কৃতকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করা হয়েছিল এবং সেটা সেন রাজত্বের আমলে। তখন ব্রাহ্মণরা একধাপ এগিয়ে বলা শুরু করল, সংস্কৃত হচ্ছে দেবভাষা আর বাংলা হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট ভাষা। মানুষের সৃষ্ট ভাষা তো দেবতাদের ভাষার কাছেই আসতে পারে না—মর্যাদায় অনেক নিচু। তখনই ব্রাহ্মণরা ফতোয়া দিয়েছিল তারা রৌরব নরকে যাবে যারা বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করবে। ভাগ্যিস তখন বখতিয়ার খিলজী বাংলা বিজয় করলেন এবং মুসলিম শাসন শুরু হলো। তখন রাষ্ট্রভাষা হলো ফার্সি। কিন্তু মুসলমান শাসকরা অত্যন্ত উদার ছিলেন। তারা এখানকার মানুষের যে ভাষা সে ভাষাকে উদার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং যথার্থই মধ্যযুগে মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় কবি লেখকরা হিন্দু ঐতিহ্য, মুসলিম ঐতিহ্য নিয়েই বাংলা পুস্তক রচনা করেছেন।
* একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিল, তারপরও কেন উর্দুভাষীরা এ আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল?
—উর্দুভাষী আমলাদের এটা একটা নিজস্ব ব্যাপার ছিল। প্রত্যেকেই তাদের ভাষার প্রভাব সৃষ্টি করতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যে একটা ষড়যন্ত্রও ঘটেছিল। ১৯৪৯ সালে একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে যে, বাংলা ভাষার হরফ বদলাতে হবে। কোরআনের হরফ যেরকম, ফার্সির হরফও সেরকম, উর্দুও একই, তাহলে বাংলা কেন বাঁ দিকে যাচ্ছে ইত্যাদি। এগুলো অনৈসলামিক ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়েছে। হরফ বদলানোর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফজলুল হক হলে তমদ্দুন মজলিশের আয়োজনে আলোচনা সভা হয়েছিল। আমি সেখানে প্রথমত আর্টিক্যালটা পড়লাম এবং তমদ্দুন মজলিশের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিকে এটা প্রথম আর্টিক্যাল হিসেবে ব্যানার হয়েছে। এভাবে দেখা যায়, ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিছু কায়েমী স্বার্থবাদীরাও করেছিল।
* বর্তমানে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে তমদ্দুন মজলিশের যে ভূমিকা সেটিকে আড়াল করার চেষ্টা এবং ভাষা আন্দোলনকেও অনেকটা ইসলামী সংস্কৃতির বিপরীতে স্থাপন করার চেষ্টা বা প্রবণতা সম্পর্কে আপনি কী বলবেন।
—আমাদের দেশে নানা রকমের উল্টা-পাল্টা চলেছে, চলছে। এটা তো চলতেই থাকবে। একটা কথা আমাকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, ইসলামী প্রতিষ্ঠান হয়েও তমদ্দুন মজলিশ ভাষা আন্দোলন করেছিল। তখনকার বড় বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু ভাষা আন্দোলনের পক্ষে এগিয়ে আসেনি। এটা কিন্তু সত্য। তারা মনে করত যে, বাংলা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা। এরকমভাবে বিভাজন ছিল। তাছাড়া ভাষা আন্দোলনকে পরবর্তীকালে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সবাই সমর্থন করল। ফলে এ আন্দোলনে তাদেরও প্রভাব সৃষ্টি হলো। প্রথমে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ অর্থাত্ পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এটা সমর্থন করল। সেটাও তখন ইসলামপন্থী ছিল। যা-ই হোক, তখনই এটার পরিসর একটু বাড়ল। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। তারাও ইসলামপন্থী ছিল কিন্তু এতটা সোচ্চার ছিল না। মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরা রীতিমত সচেতন ইসলামপন্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের গোড়ার যে মেনিফেস্টো, যেটি শামসুল হক সাহেব লিখেছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা কনফারেন্সে তিনি সেটি পাঠ করেছিলেন। সেখানে একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। আমিও গিয়েছিলাম একজন সাংবাদিক হিসেবে, সেখানে ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন। শামসুল হক সাহেব একটা পুস্তিকা পড়ছিলেন লম্বা ভূমিকা দিয়ে, এটা ফজলুল কাদের সাহেবের পছন্দ হচ্ছিল না। তিনি বলেন, আমরা এসেছি একটি বিরোধী দল প্রতিষ্ঠার জন্য, এত আদর্শের কচকচানি কেন? মওলানা ভাসানী একথা শুনে ‘খামোস’ বলে চিত্কার দিয়ে উঠলেন। বললেন, আমরা পকেট মুসলিম লীগের বদলে, আদর্শহীন মুসলিম লীগের বদলে আমজনগণের জন্য, আদর্শের জন্যই আমরা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে এসেছি। যার আদর্শ পছন্দ না হয় তিনি বেরিয়ে যেতে পারেন। তার প্রয়োজন নেই। ফজলুল কাদের চৌধুরী একথার পর গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। আমার চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। এরকমভাবেই আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছে। পরবর্তীকালে এর মধ্যে অন্য প্রভাব এসে যায়। যে উদ্দেশ্যে তারা যাত্রা শুরু করে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে সে উদ্দেশ্য আর থাকেনি। এখনও তাদের মধ্যে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ আছে। যাদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ এবং আচরণে এখনও ইসলামী সৌজন্যতা আছে। সেক্যুলারিজমের কথা তারা এখন বেশি জোর দিয়ে বলে। বলতে বলতে তারা তাদের লাইনটা, নীতিটা, আগের যে আদর্শ সেটা হারিয়ে ফেলেছে। এটা আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য।
*আমাদের ভাষার মধ্যে এখন এমন কিছু শব্দ প্রতিস্থাপিত হচ্ছে—যেমন- মুসলিম কেউ মারা গেলে আমরা বলি বা বলতাম ‘মরহুম’। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মুসলিম মৃত ব্যক্তির নামের সঙ্গে ‘প্রয়াত’, ‘প্রয়াণ’, ‘মহাপ্রয়াণ’ জাতীয় শব্দাবলী ব্যবহৃত হচ্ছে। এরকম অনেক শব্দই প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন?
—ভাষা যিনি ব্যবহার করেন তার মনোভাব এ ভাষার মধ্যে ফুটে ওঠে। আমরা ‘মরহুম’ শব্দ প্রয়োগ করি, মুসলমানরা। এটা মুসলিম বিশ্বাস থেকে। ‘মরহুম’ মানে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত। সাধারণত হিন্দুরা প্রয়াণ, প্রয়াত ব্যবহার করে। যদি নিউট্রাল কোনো শব্দ ব্যবহার করি তাহলে বলা যেতে পারে ‘পরলোকগত’। কিন্তু কারও কারও প্রয়াত কথাটার প্রতি আগ্রহ থাকতে পারে। তবে মুসলমানদের তাদের নিজস্ব পরিভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। একটা বাস্তব কথা হচ্ছে, বাংলা ভাষার একসময় আরবি-ফারসি শব্দের যে প্রভাবটা ছিল সেটা এখন ততটা নেই।
* বর্তমানে স্যাটেলাইটের কারণে হিন্দি ভাষার একটা প্রভাব তৈরি হচ্ছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
—ভাষা আন্দোলনের দেশ হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি ব্যাপার বলে আমি মনে করি। আমরা উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে কখনও লড়িনি, আমরা লড়েছিলাম উর্দুর একাধিপত্যের বিরুদ্ধে, চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে। এখন আমাদের দেশে চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আমাদের কোনো টিভি চ্যানেল কলকাতা বা ভারতে দেখানো হয় না, কিন্তু তাদের সবগুলোই আমরা দেখি এবং এর ফলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রচুর হিন্দিপ্রীতি, হিন্দিসঙ্গীত, হিন্দি অশ্লীলতার একটা প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটা লজ্জার। এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের তারুণ্যের মতো বর্তমান তারুণ্যকেও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
* ইংরেজি মিডিয়ামে যারা পড়ালেখা করছে ওদের অনেককে দেখা যায় বাংলা তো লিখতেই জানে না, পুরোপুরি বাংলায় কথা বলতেও তাদের অসুবিধা হয়—এ ব্যাপারটাও তো ঘটছে।
—ঘটছে শুধু তাই নয়, এদের কারও কারও কাছে বাংলা ভাষা অশ্রদ্ধেয়, এটাকে ওরা হেয় করে। এ ব্যাপারে তো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার। কিন্তু রাষ্ট্রের নেতারা এ ব্যাপারে ভীষণভাবে উদাসীন। নেতারা, যে দলই ক্ষমতায় যায় দেখা যায় তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা নেই।
* আপনাদের সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ ষাট বছর পার করেছে। এ সংগঠনটি ইসলামের সাংস্কৃতিক অবয়ব ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল। ষাট বছরে আপনারা কতটা সফল হয়েছেন?
—খোলাফায়ে রাশেদীনের পর থেকে মুসলিম সমাজের পতন শুরু হয়। সে পতনের একপর্যায়ে রাজতন্ত্র, খেলাফতের নামে রাজতন্ত্র, তারপর নানা বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়। সাম্রাজ্যবাদীদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হই আমরা। এটা এখনও চলছে। তারপরও আমি মনে করি, যদি তমদ্দুন মজলিশের প্রচেষ্টা শুরু না হতো তাহলে তো আমাদের পতন আরও গভীর হতো, বিজাতীয় প্রভাব আরও বাড়ত। আজকে আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে যে প্রচুর মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ইসলামের ব্যাপারে আছে, এটার জন্য আমি মনে করি তমদ্দুন মজলিশ কৃতিত্বের দাবিদার। উন্নতি-অবনতির মধ্য দিয়ে এ সংগঠন এগিয়েছে। জোয়ার-ভাটার মধ্য দিয়েই। তবে একটি দাবি করতে পারে এ সংগঠন যে, এরা বড় কোনো ভুল করেনি।
* তমদ্দুন মজলিশের প্রথম প্রজন্মকে এদেশের মানুষ যেভাবে পেয়েছে, তাদের প্রতিভার অবদান আমাদেরকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্য থেকে আমরা দেখিনি তেমন কাউকে, যারা এ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের প্রতিভাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। যেমন দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ চিন্তার ক্ষেত্রে, শাহেদ আলী কথাসাহিত্যে, নাটকে আসকার ইবনে শাইখ অসাধারণ অবদান রেখেছেন।
—এদের মধ্যে দু’জনের কথা আমি বলব এরা তমদ্দুন মজলিশের সঙ্গে শুরু থেকে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি জড়িত ছিলেন। যার ফলে অন্য যারা আছেন তারা এদের চাইতে ক্ষুদ্রতর কোনো ব্যক্তিকে নিয়েও অনেক বেশি মাতামাতি করেন। এটা এক ধরনের ক্ষুদ্রতার পরিচয়। এর প্রভাব যদি আমরা না কাটিয়ে উঠতে পারি তাহলে আমাদের আরও অনেক ভুগতে হবে। আসকার ইবনে শাইখ নাটকের ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন সেটা একশ’ বছর ধরে বাঙালি মুসলমান সমাজের উপকারে লাগবে। এত বড় কাজ কেউ করেনি। ফররুখ যে কাজ করেছেন, নজরুল যে কাজ করেছেন সেটার মতোই। যাই হোক, এরকম দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফসহ অনেকের ব্যাপারেই সমাজের অন্যরা চুপ। যে কারণে এদের যে প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপর পড়ার কথা ছিল, সে প্রভাব পড়েনি। (সংক্ষেপিত)

0 comments:

Post a Comment