Wednesday 20 February 2013

Filled Under: ,

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি। বিডিনিউজ৬ ব্লগস্পট এর যাত্রা শুরু।

Share
অমর একুশে আজ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের রক্তস্নাত মহান শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ভাষা দিবস। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রথম বীজটি রোপিত হয় এই দিন ভাষার প্রতি মমত্ববোধ থেকেই। জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছে সেসব শহীদের আত্মবলিদান।

ভাষার জন্য লড়াই, আত্মোত্সর্গ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আর এ লড়াইয়ের মধ্যেই বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ উদঘাটিত হয় স্বতন্ত্র মাহাত্ম্যে, ভিন্ন উচ্চতায়। আমাদের সার্বিক বিজয়ের সূতিকাগার এই একুশ। তাই একুশ শুধু উদযাপনের বিষয় নয়।
আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মদানের গৌরবগাথা আজ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও দেশটি দিবসটি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। একুশের চেতনায়, এর তাত্পর্যে সব ভাষাভাষী মানুষ আজ আন্দোলিত-আলোড়িত। সারা বিশ্বের প্রায় ছয় হাজার ভাষায় কথা বলা মানুষ যখন আমাদের ভাষা দিবসকে তাদেরও মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন বাংলাদেশী হিসেবে এক অনির্বচনীয় গর্বে ভরে ওঠে বুক। একুশ সবার নিজ নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার তাগিদও সৃষ্টি করে।
এতকিছুর পরও সেই পুরনো প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা কি মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দিতে পেরেছি? নাকি বিগত ৬০ বছর ধরে কেবল মুড়িয়ে রেখেছি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায়? ভাষা আন্দোলনের চেতনায় কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা, তা নিয়ে আজও প্রতীক্ষার শেষ হয়নি। স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটেনি—যেমন হওয়ার কথা ছিল। আমাদের সাহিত্যচর্চা এগিয়েছে—এ বিবেচনায় বাংলা চর্চা পিছিয়ে নেই। কিন্তু সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনগ্রাহ্য একটি বাংলা বানানরীতি এখনও যেন সোনার হরিণ হয়ে আছে। বাংলা একাডেমীর মতো প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও বানানরীতি অনুসরণের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য অভিধানের অভাব এখনও অনুভূত। এটি একটি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বললে অত্যুক্তি হবে না। এমনকি বাংলা একাডেমী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মেনে চলছে না অভিন্ন বানানরীতি। ফলে বানানের ক্ষেত্রে বিরাজ করছে এক গোলমেলে অবস্থা। বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও সর্বত্রই তা উপেক্ষিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার অনুশীলন দেখা যায় না। পারিবারিক মনোযোগও এক্ষেত্রে উত্সাহব্যঞ্জক নয়।
বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। বাংলা ভাষার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা আয়ত্ত করাও সময়ের দাবি। কিন্তু মাতৃভাষাকে অবহেলা করে তা মোটেই সম্ভব নয়। অথচ ক্রমেই এ প্রবণতা বাড়ছে। অন্যান্য ভাষায় লিখিত অনুবাদের ক্ষেত্রে এটি এক বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবেই আমাদের সামনে আসে। মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করার বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার।
দুঃখজনকভাবে তা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বছর বছর আনুষ্ঠানিকভাবে পদক ও পুরস্কার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা বহন করে না।
ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস উদযাপন আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে বন্দী করে রাখা একুশের চেতনার অনুগামী নয়। সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমেই একুশ উদযাপনের মাহাত্ম্যকে রূপায়িত করা সম্ভব। সে সঙ্গেই বিলুপ্তির পথে ধাবমান ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলোকেও টিকিয়ে রাখার দায় আমরা এড়াতে পারি না। বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। নিবিড় চর্চায় ক্রমাগত উত্কর্ষ সাধনের মাধ্যমে এর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মদান সার্থক করে তোলা সম্ভব

0 comments:

Post a Comment